ভালবাসার গল্প-৩

ভালবাসার গল্প-৩

.
.
অফিস থেকে এত দেরী তে ফিরেছেন কেন? কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি!
- তোমাকে কৈফিয়ত দেয়া লাগবে? যাও নিজের কাজ করো... আমার জন্য এত ভাবা লাগবে না।
- ও সরি। আপনার খাবার টেবিলে রাখা আছে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়েন কেমন! আমি খেয়ে নিচ্ছি। সময়মত খাবেন কিন্তু! নাহলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
- হ্যাঁ যাও তুমি।



*** রাজু আর মেধার বিয়ে হলো দু'মাস হলো। কিন্তু তাদের মধ্যে মিলবন্ধন বোঝাপড়া এখনো হয়ে উঠেনি বললেই চলে। অবশ্য মেধা রাজুর স্ত্রী হিসেবে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অপরদিকে রাজু মেধার দিকে কোনো ইন্টারেস্ট ই নেই। থাকবে কি করে! রাজু যাকে ভালোবাসতো, সে তার সাথে ব্রেক আপ করে বিদায় নিয়েছে। এর ছ'মাস পরে রাজুর মা বাবা দেখেশুনে মেধা নামে একটা অপরূপাকে তার বউ হিসেবে ঠিক করে। রাজু বিয়েটা মা-বাবার দিকে চেয়ে মেনে নিলেও মেনে নিতে পারে নি সেই অপরূপ মেধাকে। শ্বশুরবাড়িতে মেয়েদের একমাত্র ভালো বন্ধু হলো তার স্বামী যার মাধ্যমে কোনো মেয়ে সবার সাথে পরিচিতি লাভ করে কিন্তু সেই বন্ধুটিই যখন মেয়েটির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখনকার অবস্থা একটিবার চিন্তা করে দেখুন...! অবশ্য এই নিয়ে মেধার দুঃখ থাকলেও কিন্তু কখনো মুখে প্রকাশ করে নি। নিজের মত করে সবার সাথে হাসিখুশি থেকে সবার চোখের মণি হয়ে গেলো মেধা কিন্তু রাজুর নজরে কখনওই পড়লো না। রাজু যেন তাকে দেখেও দেখে না এমন অবস্থা! ঘুমানোর সময় ও তারা একই বিছানায় ঘুমোয় নি কখনো। কোনোদিন হয়তো রাজু সোফায় ঘুমায় কোনোদিন মেধা। মানে যে যার আগে বিছানা দখল করে নিতে পারে আরকি! হাহাহা! মেধা অবশ্য বিছানা নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় নি, তাই বেশির ভাগ রাতেই সে সোফায় ঘুমাতো।
** একদিন কোনো এক প্রসঙ্গে মেধা তার স্বামী রাজুকে জিজ্ঞেস করে...
- আচ্ছা আপনার ex gf দেখতে খুব কিউট ছিলো না???
- তোমার এত জানার কি দরকার? আমাকে এসব কখনো জিজ্ঞেস করবা না।
- ও আচ্ছা..! আমার থেকেও বেশি সুন্দরি ছিল সে??
- হুঁহ! কোথায় মেধা আর কোথায় প্রিয়া!!!! কিসের সাথে কি মিলায়!
- আমার মতো কি সে আপনার কেয়ার নিতো?
- কেয়ার নিতো কিনা জানি না, তবে আমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসতাম!
- হাহা.. ভালোবাসা! ভালোবাসলে সে আপনাকে ছেড়ে আরেকটা ছেলের সাথে....
- প্লিজ! চুপ করো! আমার ভালো লাগছে না। তুমি এখন যাও।।।প্লিজ!
*** নিজের স্বামীর ভালোবাসা কোনো মেয়ে পেতে চায় না!? মেধাও চায়। কিন্তু যতবার সে তার স্বামীর কাছে আসতে চায় ততবার ই রাজু তাকে দূরে ঠেলে দেয়। রাজুর জন্য সে কি না করে! সময় হলেই খাবার টেবিলে রেডি করে দেয়,রুম গুছিয়ে দেয়,কাপড়চোপড় ধুয়ে দেয়,অফিসের সময় হলে সবকিছু গুছিয়ে দেয় আরো কত কি! কিন্তু এসব কিছু রাজু কখনো পাত্তা দেয় নি।
**হঠাৎ এক রাতে...
- মেধা,,তোমার সাথে একটা কথা ছিল...!
- আমার সাথে? কি... কি... কথা? (আনন্দিত হয়ে।কারন রাজু কখনো তাকে এভাবে বলে নি।)
- হ্যাঁ।
- বলেন বলেন! কই বলেন তাড়াতাড়ি?
- তুমি প্লিজ, ব্যাগপত্র যা আছে গুছিয়ে নাও। এখানে আর থেকো না। তুমি এখানে থাকলে আমার খুব অসহ্য লাগে। সো প্লিজ যাও নিজের বাড়িতে...
- ( মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো মেধার। কি চিন্তা করছিল আর হলো তার বিপরীত!!)
কি বলছেন এগুলো? আমি চলে যাবো?
- হ্যাঁ যাবে। আমি বলছি তাই যাবে!
- না মানে,,,আপনাকে একা রেখে আমি চলে গেলে আপনার কষ্ট হবে তো!!!
- তুমি থাকলে বরং আমার কষ্ট আরো বেশি হয়। তোমাকে সহ্য করতে পারি না আমি!
** কষ্ট অভিমানে কান্নায় ভেঙে পড়লো মেধা। রাগে, অভিমানে একমূহুর্ত দেরী না করে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল সে...।
*** এরপরের দিনের ঘটনা...
"মেধা" কি জিনিস সেটা হাড়ে হাড়ে অনুভব করতে লাগলো রাজু। সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে রাতের ঘুমানো অব্ধি কোনো কিছুই ঠিকমত গুছিয়ে করতে পারছে না রাজু।
সঠিক সময়ে ঘুম থেকে রাজু কে তুলে দেয়া, ব্রেকফাস্ট রেডি করে রাজুর ঘরে পৌঁছে দেয়া,জিনিসপত্র গুছিয়ে দেয়া, কাপড়চোপড় ধোয়া সহ রাজুর যাবতীয় কাজ সব মেধা নিজ হাতে করতো। কিন্তু আজ মেধা রাজুর পাশে নেই। তাই সব কিছু এভাবে এলোমেলো মনে হতে লাগলো রাজুর। ভাবতে লাগলো সে যেন কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছে। সাত/আট মাস আগে যে ব্যথা সে পেয়েছিল,আজ ওই ব্যথা আবার অনুভব করতে লাগলো রাজু।
*এদিকে মেধাও রাজুকে খুব মিস করতে শুরু করলো। মুখ দিয়ে কখনো "ভালোবাসি" শব্দটা উচ্চারণ না করলেও মনে মনে রাজু কে সত্যিই সে অনেক ভালোবাসে। ভাবছে রাজু কে ফোন দেবে কিন্তু রাগে,অভিমানে মোবাইলের আলো জ্বেলে আবার রেখে দেয়। কল দেয়া হয় না আর!
এভাবে কেটে যায় একদিন, দুদিন,তিনদিন কিন্তু
চতুর্থ দিনের শুরুতেই মানে ভোরবেলায় মেধার মোবাইলে কল বেজে উঠে। মোবাইলের দিকে নজর দিতেই রীতিমত অবাক হয়ে ওঠে মেধা।
তার স্বামী রাজু কল দিয়েছে! মেধা খুশি ও হলো আবার ভয় ও পেলো! কি না কি হয়! ফোন তুলতেই অপরপাশ থেকে...
- হ্যা..হ্যালো...?? মেধা?
- আপনি এত ভোর বেলা আমাকে ফোন দিয়েছেন?
- হ্যাঁ আসলে...
- আপনি কি অসুস্থ?
- হ্যাঁ কিভাবে জানলে? গতকাল রাত থেকেই প্রচণ্ড জ্বর এসেছে। আমি মনে হয় মারা যাবো..।
তুমি কি আমাকে শেষ দেখা দেখে নিতে আসবে? হ্যালো.....হ্যালো... হ্যালো মেধা???
***এইদিকে মেধা, রাজুর অসুস্থতার কথা শুনে কল কেটে দিয়ে দৌড়ে ছুটে চলে এলো রাজুর কাছে। এভাবে রাজুকে বিছানায় মড়ার মত পড়ে থাকতে দেখে মেধা প্রায় কেঁদে অস্থির।
- আপনাকে এজন্য ছেড়ে যেতে চাই নি। আমি জানি আপনার কিছু না কিছু হবেই...
- তোমাকে ছাড়া খুব অসহায় মনে হচ্ছিল আমার। খুব মিস করছি তোমাকে। তাই আর থাকতে না পেরে তোমাকে ফোন করে আনলাম!
- ওসব কথা পরে হবে। আগে আপনাকে সুস্থ করার ব্যবস্থা করতে হবে তো। চলুন আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। আপনাকে সুস্থ হতে হবে তো...।
*সেদিন রাতের ঘটনা,
এখন রাজু একটু সুস্থ! রাজুকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে মেধা। রাজু শুধু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেধার দিকে চেয়ে!
- এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
- চিন্তা করছি তোমাকে নিয়ে।
- আমাকে নিয়ে আবার কিসের চিন্তা? ও.. আচ্ছা বুঝতে পেরেছি... চিন্তা করবেন না,আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলে আমি আবার বাপের বাড়িতে চলে যাবো।
- আবার চলে যাবে?
- আমি থাকলে তো আপনার অনেক কষ্ট হয়। তাই আপনাকে কষ্ট দিতে তো চাই না আমি।
- কিন্তু এখন ব্যাপার টা সম্পূর্ণ ঘুরে গেছে। তোমাকে ছাড়া থাকতে এখন আমার খুব কষ্ট হয় মেধা!
- কষ্ট হওয়ার কি কোনো কারন আছে?
- কারন তোমার অনুপস্থিতিতে আমি তোমাকে প্রচণ্ড মিস করি।
- মানে কি চান আপনি?
- সারাজীবন এভাবে তোমার হাতে খেতে চাই। পারবে না? আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি মেধা!
- সত্যি তো?? এভাবে ভালোবাসবেন সারাজীবন? কথা দিন?
- কথা দিলাম। জীবনে তোমার এ দুচোখের আড়াল কখনো হবো না!
- হিহিহিহি (মিষ্টি এক হাসি)
....
**কোনো একদিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছিল রাজু। হঠাৎ পেছন থেকে মেধা এসে রাজু কে জড়িয়ে ধরলো।
- কি ব্যাপার? আজ এত সকাল বেলা জড়িয়ে ধরলে যে?
- এদিকে ফিরেন। আপনার হার্টবিট মাপতে চাই।
- আচ্ছা ফিরলাম।
- আহাহা!! কত সুইট সাউন্ড! আপনাকে জড়িয়ে ধরে আপনার মাঝে মিশে যেতে চাই আমি...
- অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে তোহ! এইবার তো ছাড়ো...
- লেট হলে হোক, আপনিও না উফফফফ!!!!

Comments

Popular posts from this blog

গল্প: বউ বউ লাগছে

বউয়ের মাইর

একটা বাস্তব জীবন কাহিনী