গল্প: বউ বউ লাগছে


বউ বউ লাগছে

.
.
অনেক দিন ধরে খালার বাসায় যাই না। অনেক দিন বললে ভুল হবে, অনেক বছর ধরে যাই না। সেই ক্লাস নাইনে থাকতে একবার গেছিলাম, তারপর বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় এসে পড়াশোনা শুরু করি " তাই বাড়িতে গেলেও আর খালার বাসায় যাওয়া হয় না। তাই ভাবলাম এবার দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়েও খালার বাসায় যাব বেড়াতে।
.
সবাইকে খুব মিস করছি, খালা, খালু আর,,,,,,,,, ধ্যাত নামটাই তো মনে আসছে না। ও আমার ১ বছরের বড়, ও হ্যাঁ এবার মনে পড়ছে, ওর নাম সিনথিয়া। বয়সে বড় হওয়ার জন্য আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ওকে আপু বলেই ডাকতাম।
.
আর যখন ছোট ছিলাম তখন খালার বাসায় গিয়ে ওর সাথে বউ - জামাই খেলতাম। ও বউ হতো আর আমি বর সাজতাম। তারপর দুজনে মিলে খেলতাম, আমাদের কুটুম ছিলো কয়েক টা পুতুল।
.
তখন ও অনেকটা শ্যামলা টাইপের ছিলো,, তাই ওকে কালো বলে অনেক ক্ষ্যাপাতাম। আর ও রেগে আমাকে মারতো। কিন্তু এখন তো বড় হইছি, এখন ওসব কথা মনে পড়লে হাসিও পায় আবার লজ্জায় করে।
.
আমি নীল এবার অনার্স ফাইনালে , আর সিনথিয়াও বোধ হয় আমার সাথে একই ক্লাসে পড়ে,, কারণ ও আমার বয়সে বড় হলেও ছোট থেকে আমরা এক ক্লাসেই পড়তাম। যদি ও কোনোটায় ফেল যায় তাহলে আমার নিচে আর তা নাহলে আমার সাথেই পড়বে, এটা স্বাভাবিক।
.
আমি এখন বাসায় না, আমি ঢাকা থেকে পড়াশোনা করছি, আর ওরা আমরা এক জেলায়ই থাকি , শুধু এলাকা ভিন্ন। আমি চাইলে ওখানেই আমাদের কলেজে ভর্তি হতে পারতাম কিন্তু মা বাবার জন্য পারিনি। কারণ তাদের ইচ্ছে আমাকে ঢাকা পড়াবে। তাই আমিও ঢাকা চলে আসি।
.
খালা খালু হয়তো এখন আমাকে দেখে চিনতেই পারবে না, আর সিনথিয়া আপু তো দূরে থাক, ও তো অনেক আগে আমাকে দেখছে এখন চেহারা মনে রাখতে পারবে কি করে? আমার চেহারায় অনেক পরিবর্তন আসছে, তাই অনেক দিন না দেখার কারণে হয়তো চিনতে পারবে না।
.
খালার সাথে কয়েক দিন পরপর ফোনে কথা হয় তবে আর কারও সাথে হয় না, কে জানে আপু কেমন আছে আর কি রকম হইছে।
এখানে এসেছি অনেক বছর হইছে তবুও আজকে কেন জানি একটু বেশীই মনে পড়ছে ওদের।
.
২০ দিন পর,,,,,,
স্যারের পায়ে ধরে ১ মাসের ছুটি চেয়ে এনেছি,, আবার কলেজ একটা কারণে দশ দিনের বেশি বন্ধ আছে আর দিন আমি ছুটি চেয়ে আনলাম।
.
উফফফ বাচা গেল,, এখন টিকিট কেটে ছো মেরে বাসায় চলে যাব তারপর খালার বাসায় যাব।
.
বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজালাম আর মা এসে দরজা খোলে দিল,,,
- জ্বী বাবা তুমি কে?
- হোয়াট?
- এখানে কি চাও?
- মা আমি নীল।
- আমার ছেলের নাম তুমি জানলে কি করে?
- উফফফ, আমিই তোমার ছেলে নীল।
- আমার ছেলে তো আমাকে না জানিয়ে বাসায় আসে না।
- যাও তো ঢুকতে দাও। ( জোর করে ঘরে ঢুকলাম)
- পাগল ছেলে,, এভাবে না জানিয়ে আসলি কেন?
- সারপ্রাইজ।
- সত্যি করে বল বলছি,,
- তুমিও না,,,, খালার বাসায় যাব।
- হইছে এবার বুঝছি।
- কি বুঝছো?
- এতো দিন পর সেই পুতুল খেলা বউটার কথা মনে পরছে।
- মানে!!!!
- সিনথিয়ার সাথে দেখা করতে যাবি?
- ওর সাথে দেখা করে আমি কি করবো?
- বিয়ে করা বউয়ের সাথে দেখা করে কি করবি মানে!!!!
- বউ????
- ছোট বেলায় যখন বউ জামাই খেলতি তখন তো বউ বলেই ডাকতি।
- মা য়য়য়,,,, ও আমার বড়, আমার আপু হয়, ওকে বউ করবো কেন?
- আইচ্ছা,,, গিয়ে যখন ওকে দেখবি তখন এ কথা মনে থাকলেই হলো,,,
- ফ্রেস হয়ে আসি খাবার দাও,, কাল সকালেই যাব ওখানে। আর কি সব উল্টো পাল্টা ভাবো, যত্তোসব।
.
হুম, ফ্রেস হতে গেলাম। বাসায় এসে একটু দাড়াতেও পারলাম না, মন মেজাজ গরম করে দিল। ওকে দেখে আমার বউ বানানোর ইচ্ছে হবে কেন? যত্তোসব """ আর ও সেই আগের মতো শ্যামলাই রয়ে গেছে বোধ হয়,, আর আমার পেছনে কত সুন্দরী মেয়ে ঘুরঘুর করে। আর সিনথিয়া এতো দিনে কেমন হইছে কে জানে।
.
বিকেলে বাসায় আসলাম তাই খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
তারপরের দিন সকাল ১০টায় রওনা হলাম ওদের বাসার দিকে,,
.
স্টান্ডে এসে নামলাম,,
একটু ভেতরে যেতেই আমার বাতি নিভে গেল,,, চিনতে পারছি না কিছু,, সব চেন্জ হয়ে গেছে এ কয় বছরে,, এখন কি হবে?
.
ওয়াও,,, এতো সুন্দর পরী,, আমার সামনে দিয়ে এগিয়ে আসছে ধীর পায়ে ফোন টিপতে টিপতে। কেউ এতো সুন্দর হতে পারে? ক্রাশ)
ধ্যাত, চিনি না জানি না, এভাবে কেউ কারও উপর ক্রাশ খায় নাকি,,
.
যাচ্ছে যাক, আমার এতো ক্রাশ খেয়ে কাজ নেই,,,
অতঃপর আমি মাথা নিচু করে পরী কে অতিক্রম করতে লাগলাম,,
আর হটাৎ কে যেন আমার কলার ধরে দিল এক টান,,
মাথা উচুঁ করতেই দেখি, ওই পরী আমার কলার ধরে আছে আর আমার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।
.
- জ্বী আপু, এটা কি হলো আমার কলার ধরলেন কেন?
- এইতো ভদ্র ছেলে, আমাকে সবসময় আপু বলবি আর আপনি করে বলবি, এখন চল আমার সাথে।
- মামমমম মানে, কই যাব আপনার সাথে?
- আমার বাসায়।
- একি আমি আসছি খালার বাসায় আর আমি আপনার সাথে যাব কেন? আপনি কে?
- আরে হনুমান, তোর খালাই আমার আম্মু।
- হোয়াট, তার মানে তুই সিনথিয়া?
- ওই তোকে না বলছি আপনি করে বলতে।
- ধুর, বউকে কেউ আপনি করে বলে নাকি? ( মার কথা বোধ হয় সত্যি হয়ে গেল,,,, ও মা তোমার ছেলে প্রেমে পরে গেছে গো, তাও আবার ১ বছর সিনিয়র মেয়ের)
- এই দ্যাখ ভালো হবে না কিন্তু। আগের কথা ফেলে দে, এখনকার কথা ভাব,, আর এখন আমার সাথে চল।
- ওকে।
- আর আমাকে এখানে আসছি এটা জানলি কেমনে?
- তোর আম্মু বলে দিছে ফোন করে তুই এখানে আসছিস আর আমার আম্মু জানতো তুই কিছু চিনতে পারবি না তাই আমার আম্মু আমাকে জোর করে এখানে পাঠিয়ে দিছে।
- জোর করে মানে? জোর করে না পাঠালে তুই আসতি না?
- দরকার কি?
- ওহ্,, তাইতো,, দরকার কিসের আবার। ( মনটা খারাপ হলো)
- হু, জোরে হাট,
- আমাকে চিনলি কেমনে?
- ফোনে সব বলে দিছে তোর বর্ণনা। আর তোর কাছে কি থাকবে সেটাও ,তোর এই নীল ব্যাগ, নীল শার্ট প্যান্ট,, সব শুধু নীল আর নীল।
- আমার নামটাই নীল,, তাই সবকিছু নীলই রাখি সবসময়।
- হুম,
.
তার পর খালার বাসায় চলে এলাম ওর সাথে।
বিশ্রাম নিতে লাগলাম বিছানায় শুয়ে,,, ভাবলাম,,, ওর তো অনেক পরিবতর্ন আসছে, এখন বেশী মিশতে চায় না। রেগে কথা বলে। আর খুব শক্ত ও, ওকে যেকোনো ভাবে গলাতেই হবে। নাহলে ওকে হারাতে হবে।
.
যেকোনো ভাবে ওর মন জয় করবই। আজ থেকেই মিশন শুরু করবো, যা হবার হবে।
তারপর উঠে পড়লাম,, অনেক সময় বিশ্রাম নিলাম, ঘুমও এসে গেছিল, তিনটা বাজে,, তাই খেয়ে নিয়ে সিনথিয়ার ঘরে গেলাম।
.
গিয়ে দেখি ম্যাসেঞ্জারের শব্দ " তার মানে ও ফেসবুকে চাটিং করছে কার সাথে, হুম, দেখতে হবে ব্যপার টা, যেই উকি দিলাম ওমনি আমাকে দেখে ফেললো,,
.
- এই তুই এখানে কি করিস?
- চল একটু ঘুরতে যাই।
- আমি পারবো না, তুই একা যা।
- চল না, লক্ষী বউ আমার।
- মুখ সামলে কথা বলবি।
- কেন?
- ভুলেও আর বউ বলবি না।
- কেন?
- আমি তোর বউ নাকি? আমাকে আপু বলবি।
- বলবো না কি করবি? তুই আমার বউ বউ বউ।
- যা এখান থেকে ( চিৎকার দিয়ে)
- ওকে,,
( চিৎকার শুনে খালা আসলো)
.
- নীল কি হইছে?
- দেখো না খালা ওকে বললাম ঘুরতে নিয়ে যেতে কিন্তু ও যাবে না।
- তোর ফোন কিন্তু ভেঙে দিব সিনথিয়া, সবসময় ওটা নিয়ে পড়ে থাকিস, আর ছেলেটা এতো দিন পর আসলো,, ঘুরতে নিয়ে যা বলছি,,
.
- আচ্ছা যাচ্ছি যত্তোসব।
.
তারপর দুজন মিলে ঘুরতে বের হলাম। অনেক দূর এসে পড়ছি তবুও একটা কথা বলিনি,, কথা বললেই বিপদ হবে, কারণ ও এখন আমার উপরে এমনিতেই খুব রেগে আছে।
.
উফফফ ও এমন কেন? আজ আসলাম, একটু ভালভাবে কথা বললে কি এমন হতো।
হাটতে হাটতে কলাবাগানে এসে গেলাম।
.
ফুরফুরে বাতাস বইছে চারদিক দিয়ে হাটতে খুব ভালো লাগছে। এখন যদি ওর হাত টা ধরে হাটতে পারতাম তাইলে আরও ভালো হতো।
হটাৎ কিসের যেন শব্দ হলো, পেছনে তাকিয়ে দেখি সিনথিয়া মাটিতে বসে আছে,,
.
দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি পা অনেক টা কেটে গেছে, আর রক্ত পড়ছে। দেখে খুব কষ্ট হলো,,,
- এসব কি করে হলো?
- ওখানে পেরেক ছিলো আর জুতা ছিদ্র হয়ে পায়ে লেগে গেছিল।
- দেখে চলতে পারস না?
- ওটা দেখলে তো আর পা দিতাম না।
- হইছে হইছে, ( পকেটের রুমাল টা দিয়ে বেধে দিলাম)
- এখন বাড়ি যাব কেমনে? বাইক নিয়ে আয় যা।
- বাইক না আমি ওই কলাগাছের ভেতর থেকে প্লেন নিয়ে আসছি।
- এমন করে বলছিস কেন?
- কলাগাছের ভেতর বাইক পাব কই?
- তাইলে আমি যাব কি করে এখন?
- ওয়েট,,, ( কোলে তোলে নিলাম)
- নীল ভালো হবে না কিন্তু, ছাড় বলছি ছাড়।
- রাস্তা পর্যন্ত যেতে দে।
- একটুও দরকার নেই, আমি যেতে পারবো।
- ছাড়বো না, আজকে আমার বউকে কোলে নিয়েছি ছাড়বো কি করে?
- ঠাস,, এরপরও ছাড়বি না? ছাড় এবার।
- মারলি কেন?
- ছাড়তে বলছি,
- তোর রাস্তা পর্যন্ত যেতে কষ্ট হবে, তাই এতদূর আমিই নিয়ে যাই।
- তোকে আমি,,,, লজ্জা করে না তোর? আমি তোকে বকলাম মারলাম তবুও লজ্জা করে না?
- বউয়ের কাছে কি কেউ লজ্জা পায়।
- হারামজাদা,,
- গলা টা ধর তো,
- ( ইচ্ছা না থাকতেও বাধ্য হয়ে সিনথিয়া আমার গলা ধরলো)
.
তারপর বড় রাস্তার পাশে যেতেই নামিয়ে দিলাম আর আমাকে রেখেই একটা রিক্সা নিয়ে চলে গেল। আর আমি উঠতে চাইলে দুইটা ঝাড়ি দিয়ে নামিয়ে দিল। কি আর করবো, একা হেটেই গেলাম।
.
কেবল তো মাত্র একদিন হলো, আর পচিঁশ দিন থাকবো এখানে দেখি আমাকে ভালো না বেসে যায় কই। ছোট হইছি তাতে কি হইছে ভালবাসা নিজেই আদায় করে নিব।
.
তারপর বাসায় গিয়ে দেখি বিছানায় শুয়ে আছে আর এখনো রুমাল টা ওর পায়ে আছে। আমি গিয়ে কিছু বললাম না, রুমাল টা খুলে ফেললাম,, আর ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলাম কিন্তু কিছু বললো না, অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল শুধু।
.
তার পরের দিন,, সকালে দেখি হাটতে বের হইছে বাইরে ঘাসের উপর দিয়ে। একটু খুড়িয়ে হাটছে, মনে হয় এখনো একটু ব্যথা আছে।
- এইযে মিষ্টি বউ ব্যথা গেছে?
- তুই আবার বউ বলছিস?
- আগে বল ব্যথা আছে নাকি?
- একটু আছে,,
- চিন্তা করে না বউ, ঠিক হয়ে যাবে।
- আমি তোর কোন জনমের বউ।
- এই জীবনের এবং ভবিষ্যৎ জীবনের।
- দ্যাখ বাড়াবাড়ি করবি না, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।
- তাতে কি হইছে, ব্রেকআপ করে দে, আমার বউ হয়ে যা।
- আরে আমি তোর বড়, আমার পেছন ছেড়ে দে প্লিজ।
- বড় হইলে কি বিয়ে করা যায় না নাকি?
- জানি না, তুই এখান থেকে চলে যা, সয্য হয় না তোকে।
- যাব না। আই লাভ ইউ বউ। ( পাশের গাছ থেকে গোলাপ ফুল দিয়ে)
- তোকে আমি,, ওই দাড়া।
- আমাকে ধরতে পারবি না, তোর পায়ে ব্যথা পাবি।
- ধ্যাত,,, ( ঘাসে বসে পড়ছে)
- এই তুই না অনেক সুন্দর (ওর কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বললাম)
- চোখ কিন্তু গেলে দিব।
- তোর চোখ টা দে আমার টা নে যাতে সবসময় তোকে দেখতে পারি।
- তোকে আজ মেরেই ফেলবো ( কাছে এসে গলায় ধরছে)
- তাই নাকি? ( গলা ছাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলাম)
- (অতঃপর ঠাস)
.
এক বালতি রাগ নিয়ে চলে গেল। তুই ভুলে যাস না আমি ছেলে,, তোর চেয়ে শক্তি আর লম্বা সব দিক দিয়েই আমি বেশী,, আমার সাথে পারবি না। আমার মিষ্টি বউ।
.
তার পরের দিন থেকে ঠিক এই রকম ভাবে প্রতিদিন আমি ওকে কোনো ছুতো দিয়ে আমার সাথে নিয়ে যেতাম আর ফুল দিয়ে প্রপোজ করতাম। আর বাসায়ও আমি ওর পেছনে লেগে থাকতাম সবসময়, ১ মিনিটের জন্যও পিছু ছাড়তাম না।
.
ও আবার কলেজে যেতো প্রতিদিন, আর আমি ওকে নিয়ে যেতাম আর নিয়ে আসতাম।
এভাবে চলে গেল ২০ দিন।
কিন্তু আমি এখনো আমার ভালবাসার কোনো উন্নতি দেখতে পেলাম না।
.
সবসময় পেছনে পরে থাকি, কিন্তু এখনো একটু জায়গা করে নিতে পারলাম না ওর মনে।
একুশ দিনের দিন,,
ভাবলাম কতগুলো চুড়ি আরেক টা শাড়ি কিনে দেই ওকে।
.
তাই সকালে বের হলাম একটু ঘোরাঘুরি করে ১১টার সময় বাসায় ফিরে আসলাম। দেখি ওর রুমে বসে টিভি দেখছে।
- আমার বউটা কি করছে?
- তুই এ ঘরে আসছিস কেন?
- এ মা, আমার বউয়ের ঘরে আমি আসবো না তো কে আসবো?
- দ্যাখ, মাথা গরম করবি না, এমনই খুব রাগ উঠছে এখন।
- কেন?
- তোর জেনে লাভ কি? বেরিয়ে যা বলছি,,
- এইনে তোর জন্য আনছিলাম,, নীল শাড়ি, আর সবুজ, নীল, লাল অনেক গুলো চুড়ি, ধর ( হাতে দিলাম)
- তোকে এগুলো আনতে বলছি আমি? ( নিচে ফেলে দিল)
- নিবি না বললেই পারতি, ফেলে দিলি কেন? ( ওগুলো উঠিয়ে বিছানার একপাশে রেখে চলে আসলাম)
.
আমার মনে হয় কপাল খারাপ, এখনো ওর মনে জায়গা করে নিতে পারলাম না। তাই ভাবলাম ওকে আর বিরক্ত করবো না। আর চার দিন আছি ওর সাথে ভালো হয়েই থাকবো। ওর পেছনে লেগে নিজেকে ওর কাছে ছোট করে লাভ নেই।
.
তার পরের দিন, আজ সকাল ১০টা বেজে গেল এখনো উঠি নাই বিছানা ছেড়ে, চোখ চেয়ে শুয়ে আছি। সাড়ে দশটার সময় খালা আসলো,,,
- নীল উঠতো, এতো সময় কেউ ঘুমায়?
- আচ্ছা।
- খাওয়া হলে সিনথিয়া কে নিয়ে একটু মার্কেটে যাস।
- আচ্ছা দেখছি।
.
খেয়ে নিয়ে সিনথিয়া কে নিয়ে মার্কেটে গেলাম। রিক্সা করে আসছি, তবুও আজ আর একটা কথা বলিনি। কেনার সময় ওর যেটা খুশি কিনেছে আমি কিছু বলিনি, একটু পর একটা দোকানের সামনে গিয়ে হা করে দাড়িয়ে পড়লো।
.
- আপু কি হইছে এখানে দাঁড়ালেন কেন? ( ওর কথাই এখন মেনে চলছি)
- এমনি,,
- চলুন ( ওর দৃষ্টি ভেদ করে তাকিয়ে দেখি ও দুটি কাপলদের দিকে তাকিয়ে আছে দোকানের ভেতর)
- একটু দাঁড়া, একটা ফোন করবো,
- তাড়াতাড়ি,
.
ফোন বের করে কল দিতেই সেই পাশের কাপলদের মধ্যে ছেলেটির ফোন বেজে উঠলো,, ছেলে বোধ হয় এখনো ওকে দেখেনি। তাই ফোন কেটে দিল ওর জিএফ এর সামনে।
.
সিনথিয়া আপু আরও কয়েক বার দিল ফোন, যে কয়েক বার দিল সেই কয়েক বার ওই ছেলের ফোন বেজেছে আর কেটে দিছে।
বুঝতে পারলাম কি হয়েছে,, ওই ছেলেটাই বোধ হয় ওর বয়ফ্রেন্ড ছিলো,, আর এখন আপুর অনুপস্থিতিতে ওই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হইছে।
.
- নীল এই নীল, ব্যাগ গুলো ধর তো।
- আচ্ছা দিন,,
.
আরে বাবা,, কি মেয়েরে এটা, ব্যাগ গুলো আমার কাছে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে সবার সামনে ওই পোলারে ঠাস কইরা একটা দিল, তারপর আবার আমার দিকে আসছে, এইরে আবার যে কি করে,,
.
- নীল চল এখান থেকে ( আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চললো)
.
এটা কি হলো, হটাৎ আমার হাত ধরলো কেন? বাঘিনীটার আবার কি হলো, ওর কাছে যেতে দেয়নি এখন আবার হাত ধরছে,, ছোট ভাইয়ের হাত ধরতেই পারে তাই না।
.
তারপর বাসায় এসে পড়লাম। বাসায় এসে ফ্রেস হলাম, তারপর রুমে যাওয়া মাত্রই কোথা থেকে এসে আমার কাছে বসে পড়লো ধপাস করে। আমি কিছু বললাম না, আমি আমার চিন্তায় ডুবে রইলাম।
.
তারপরের দিন,,
আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে প্রায়। আজকে দিয়ে আর মাত্র চার দিন আছি, তারপরই ফিরে যাব আবার ঢাকায়।
সবার চাওয়া পাওয়া বোধ হয় পূর্ণ হয় না। কারও অপূর্ণও হয়। তেমন টা আমার হইছে।
.
সেদিন আর সিনথিয়ার কাছে যাইনি। নিজের রুমেই বসে টিভি দেখছি। শুধু একবার দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, আর ওমনি কে যেন দরজার কাছ থেকে সরে গেল, আমার এতো কিছু জেনে দরকার নেই কে ছিলো আর না ছিলো " যত্তোসব।
.
তার পর দুই দিন গেল, এ দুই দিনে সিনথিয়া আমার কাছে আসছিল শুধু ডাকার জন্য, এখানে ওখানে যেতে আর খেতে। কিন্তু এ দুই দিন আর খালাকে আসতে দিল না আমার কাছে, কিন্তু কেন?
.
চব্বিশ দিনের দিন বিকেলে রুমে বসে মিনি মিলিটারি গেমস খেলছি। হটাৎ ফোনটা কে যেন ছু মেরে কেড়ে নিল। দেখি সিনথিয়া,, আর আজ সেই আমার দেওয়া শাড়ি আর চুড়ি পরে আসছে। আর মিটিমিটি হাসছে।
.
- আপু আমার মোবাইল টা দিন।
- বাব্বা আমার বরটা তো খুব ভদ্র হইছে।
- আপু ফোন দিন।
- চল আমার সাথে।
- কই?
- ঘুরতে যাব।
- এখন পারবো না।
- থাপ্পড় খেলেই পারবি।
- আচ্ছা চলুন,,
.
অতঃপর আজ আমাকে বাধ্য হয়ে ওর সাথে যেতে হচ্ছে। কিছুদূর যেতেই,,,
- ওই একটু কোলে নে তো, পা টা খুব ব্যথা করছে।
- ব্যথা করছে কেন?
- জানলে কি আর তোকে বলতাম।
- আপু আমি পারবো না, গেলাম।
.
তারপর আমি চলে আসলাম ওখান থেকে। ওকে রেখেই, আমি জানি না ওর কি হইছে, ও আজ এমন করছে কেন?
.
.
.
.( দুজনের কথা)
.
.
.
নীল চলে গেছে সিনথিয়া কে রেখে, দৌড়েই চলে গেছে একপ্রকার। আর সিনথিয়া এখন একপা দুপা করে বাসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আর সিনথিয়ার চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে।
.
আজ কেন কাঁদছে ও, সেদিন তো নিজের বয়ফ্রেন্ড কে অন্য মেয়ের সাথে দেখলো তবুও ও কোনো রকম করলো না। আর আজ নীল ওকে রেখে চলে গেছে আর ওকে কোলে নেয়নি তার জন্য সিনথিয়া কেন কাঁদছে?
.
হুম, সেদিন ওই ছেলেটির প্রতি ওর কোনো ভালবাসা ছিলো না, আর আজ নীলের প্রতি ওর ভালবাসা আছে। কারণ এ কয়দিন নীল যেভাবে ওর পেছনে পরেছিল আর যা কিছু করছে ওর জন্য সেটা ওর আগের ভেগে যাওয়া বয়ফ্রেন্ড তার কিচ্ছু করেনি। আর তার জন্যই আজ নীলের জন্য ওর মনে ভালবাসা জমে গেছে। আজ সেই ছোটবেলার স্মৃতি গুলো সিনথিয়ার খুব মনে পরছে। আজ ওর নীলকে খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না, মুখ ফুটে আজ বলতে পারছে না নীল আমি তোকে খুব ভালবাসি।
.
তারপরের দিন,,,
সিনথিয়া কলেজ চলে গেছে, ও হয়তো জানে না আজ নীল চলে যাবে। কারণ আমি ওকে বলিই নাই আমি আজ চলে যাব।
.
১১ টার দিকে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। ১ মাসের ছুটি নিয়ে আসছি। আজ ঢাকা ছেড়ে এখানে আসছি ছাব্বিশ দিন হলো, একদিন আমাদের বাসায় আর ওদের বাড়িতে পচিঁশ দিন। বাকি আছে আর চারদিন। তিনদিন আমার বাড়িতে থাকবো তারপরের দিন চলে যাব।
.
এখান থেকে এখন স্টান্ড পর্যন্ত হেটেই যেতে হবে। প্রায় এক কিলোমিটার হাটতে হবে, উফফফ হায়রে কপাল, এখানে কেন রাস্তা পাকা করলো না। তবে রিক্সা চলে, অনেক ঝাকুনি খেতে হয় এ রাস্তায়, তাই হেটে যাওয়াই ভালো।
.
মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে হাটতে লাগলাম,, কোনো দিকে ভালো করে খেয়াল না করে,,
.
.( ওর বাড়িতে)
.
- কি রে সিনথিয়া আজ এতো আগেই চলে আসলি কলেজ থেকে?
- ক্লাস নেই তাই চলে আসছি।
- ওহ্,
- কিন্তু মা নীল কে দেখলাম রাস্তায়,, কই যাচ্ছে? স্টান্ডে যাচ্ছে? আসুক আজ আমাকে না নিয়েই গেছে।
- ও তোকে দেখেনি?
- দেখেনি বোধ হয়, বান্ধুবীরা একসাথে রিক্সায় আসছি তো তাই মনে হয় খেয়াল করেনি।
- ওহ্,
- কই যাচ্ছে?
- ঢাকায়,
- মানে!!!!
- ও চলে গেছে একটু আগে।
- না,,, তুমি কি বলছো? ও যেতে পারে না।
- কেন?
- ও আমার, আমি ওকে ভালবাসি, আমি ওকে যেতে দেব না ( দিছে স্টান্ডের দিকে দৌড়)
.
ওর আন্দাজ মতো এখনো নীল যেতে পারেনি। কারণ ও হেটে যাচ্ছে আর সিনথিয়ার ধারণা অনুযায়ী ও দৌড়ে ওকে ধরতে পারবে।
ওকে সিনথিয়ার আটকে রাখার দরকার নেই, ওকে এখন থামানোর কারণ হলো, ওর মনের কথা নীলকে বলে দেওয়া।
.
অনেক দূর আসলো এখনো পেল না, তাই আরও প্রাণপণে ছুটতে লাগলো। স্টান্ডের কাছাকাছি গিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সিনথিয়া,, শয়তানটা এখনো যায়নি, বাসের অপেক্ষা করছে,,
.
- ঠাস,
- আপু আমাকে মারলেন কেন?
- চুপ, আমাকে না বলে কেন আসলি?
- বলার কি আছে,, আমি তো একটা আপদ তাই না?
- তুই সত্যিই একটা আপদ,,
- সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত এতগুলো থাপ্পড় না মারলেই পারতেন।
- বেশ করছি, আরও কয়েক টা দেব এখন, যদি আরেক বার আপনি করে বলো।
- তাহলে কি বলবো?
- বউকে কি করে বলতে হয়ে সেটা শিখিয়ে দিতে হবে, তুমি করে বলবা।
- কে বউ?
- আমি।
- কার?
- তোমার।
- না।
- কেন? ( কান্না করে দিছে)
- বউ হতে চাইলে, এখন তুমি আমাকে প্রপোজ করবে।
- আচ্ছা করছি,, হনুমান কোথাকার।
- হুম,,
.
অতঃপর লোকালয় থেকে দূরে গিয়ে,,
.
- কি দিয়ে প্রপোজ করবো?
- আপাতত তোমার খোপার ফুল টা দিয়ে করো।
- ইসসসস শখ কত!!
- তাড়াতাড়ি,,,
- আই লাভ ইউ জামাই (হাটু গেড়ে নিচু হয়ে)
- হাহাহা,,
- হাসলে কেন?
- প্রপোজ স্টাইল টা দারুণ হইছে।
- মানে!!!
- কেউ হয়তো এখনো বিয়ের আগে, আই লাভ ইউ জামাই, বলে প্রপোজ করে নাই।
- আমরা তো সেই ছোটবেলা থেকেই জামাই বউ তাই না।
- তা ঠিক,, আর তোমাকে না এখন,,, বউ বউ লাগছে।
- আপু বলবে না কিন্তু আর!
- ধুর বউকে কেউ আপু বলে নাকি?
- ঠিক,,
.
শুরু হলো এক হাতের ফাক দিয়ে আরেক জনের হাত দিয়ে নতুন পথচলা।
কলেজে নাহয় আর কয়েক দিন পরেই যাই। আগে কয়েক দিন সামনাসামনি প্রেম করে নেই।
বিয়ে টা নাহয় পরীক্ষা দিয়ে এসেই করবো।

Comments

Popular posts from this blog

বউয়ের মাইর

একটা বাস্তব জীবন কাহিনী