অমিলিত দুইটি হৃদয়ের শেষ অধ্যায়

"অমিলিত দুইটি হৃদয়ের শেষ অধ্যায়"

.
.
-- কেমন আছেন আপনি?
-- আজ হঠাৎ তুমি ছেড়ে আপনি বললে যে....
-- হা হা হা হা,
-- হাঁসছো কেন?
-- না মানে! আসলে হয়েছি কি! আজ প্রায় ৪
বৎসর ১ মাস ৩ দিন পর তোমার সাথে দেখা হলতো। আর তাছাড়া আজ তুমি আমার সিনিয়ার ভাইয়ের স্ত্রী। তাই আপনি- তুমি কি বলে সম্বোধন করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সবগুলিয়ে ফেলেছি, হা হা হা


.
নওশিন সুটকেসের হাফট্ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
এতো বছর পর ইমুর সাথে দেখা। ইমুর মুখে এতদিন পর এমনটা কষ্টের হাঁসি হাঁসতে দেখে নওশিনের বুকের মাঝে এক অজানা ব্যাথা শুরু হয়েছে। গাল বেয়ে বৃষ্টি ফোটার মতো চোখের জল ঝড়ছে নওশিনের। ইমুর চোখটাতেও হাঁসতে হাঁসতে জল এসে ভরে ছলছল হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে, একটা পলক পরলেই চোখের মাঝের সমস্ত জল বাইরে বেড়িয়ে আসবে। দৃষ্টিটা ক্ষানিকটা ঝাপসা হয়ে গেছে ইমুর। আজ ইমুর খুব ইচ্ছে করছে পাগলীটাকে জড়িয়ে ধরতে। নওশিনেরও ব্যতিক্রম নয়, খুব ইচ্ছে হচ্ছে ইমুর বুকটার মাঝে মাথা রাখবার, একটু জড়িয়ে ধরবার। কিন্তু সেটা আজ কেবল 'মনের কথাই' মুখে বলার দুঃসাহস কারো নেই। নওশিন কাঁদতে কাঁদতে বলল---
-- এতো সঠিক ভাবে দিন, মাস, বৎসর মনে
রাখলে কি করে?
-- মনে রাখিনি, রয়ে গেছে। পহর গুলো গুনতে গুনতে আজ এই অব্ধি এসে দাঁড়িয়েছে।
.
দু'চোখের জল চাপা আঙ্গুল দুটো দিয়ে মুছতে মুছতে নওশিন জিজ্ঞাস করলো---
-- বাসার সবাই কেমন আছে?
-- কার কথা জানতে চাইছো?
-- মা-বাবা, বোন, ছোট ভাইটা?
--সবাই! সবাই অনেক ভালো আছে। মা-বাবা দুজনেই আজ নিশ্চিন্ত। বোন ও তার সুখের ঠিকনায় চলে গেছে, ছোট ভাইটা আজ আর ছোট নেই, অনেক বড় হয়ে গেছে।
-- মানে?
-- সে অনেক কথা,, বাদ দাও এসব। তুমি কেমন আছো সেটাতো বললে না?
.
নওশিন কিছু বলে উঠার আগেই ছোট্ট একটি মেয়ে কোলে সাদাশার্ট- কালোপ্যান্ট পরা একজন ভদ্রলোক ইশারা করে নওশিন-কে ডাকলো। ইমু জানতে চাইলো---
-- ইনি কি তোমার উনি?
.
নওশিন হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে সুটকেসের হাফট্ ধরে হাটা শুরু করলো। নওশিন বলল---
-- সময় পেলে একটু বাসায় এসো, সব কথা
শুনবো!!
-- জীবনের আর কিইবা বলার আছে! সবতো সেদিনই শেষ হয়ে গেছে। আমার আজ বলার মতো আর কিছুই নেই।
-- তবুও এসো, অপেক্ষায় থাকবো!!!
-- হা হা হা
-- আমি যাচ্ছি......
.
সুটকেসের হাফট্'টা টেনে ছোট ছোট পাঁয়ে হালকা আকাশী রঙের শাড়িরটার ভাজ ধরে ইমুকে ক্রস করে চলে গেল নওশিন। নওশিন চোখটা মুছতে মুছতে আহাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আর ইমু সেভাবেই দাঁড়িয়ে দু'চোখে বৃষ্টি ঝড়াতে লাগলো। কতই না সুখের ছিলো স্বপ্ন বুনা সেই দিনগুলো। ইমু বড্ড ভালবাসতো এই পাগলীটা-কে। কিন্তু অদেখা এক কালবৈশাখী ঝড় এসে সব তচনচ করে দিয়ে চলে গেল। ইমু তখন ডিগ্রী ২য় বর্ষে পড়ে। নওশিন ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষে। ভালবাসার সম্পর্কটা নওশিনের ফ্যামিলি থেকে জানতে পারায় তারা আর চুপ করে বসে থাকেনি। নওশিনের বাবা তার বড় ভাইটাকে কোন এক সময় কথা দিয়ে রেখেছিলো। মেয়েটাকে তার ছেলের সাথেই বিয়ে দিবে। তাই ইমুর ব্যাপারটা জানতে পারায় তারা নওশিনের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিয়ের রেজিস্ট্রি কমপ্লিট করে ফেলে। আর ইমু এর মধ্যেই পরীক্ষার জন্য ঢাকাতে যে ছোট্ট একটা জব করতো, সেটাও ছেড়ে দেশে চলে গেছে। সময় পরিস্থিথি আসলেই মানুষ-কে বদলাতে বাধ্য করে। ইমুকে স্বপ্নঘোরে রেখে নওশিন বাবা-মায়ের কথা ভেবে হাত ছেড়ে দেয় ইমুর। ইমুতো তার সর্বচ্চ চেষ্টা করে নওশিন-কে কাছে পাবার। কিন্তু নওশিনের কাছে থেকে কেবল হারাবার, না পাওয়ার কথা শুনে শুনে এক সময় ইমু শান্ত হয়ে যায়। অনেক বুঝায় ইমু---
-- ছোট্ট একটা আংটিতে কি আমাদের ভালবাসা বন্ধ করতে পারে। তোমার ভাইয়াতো বিদেশেই তাহলে রেজিস্ট্রি কি করে হলো। আর হলোও হোক, তাতে আমার কোন যায় আসে না।
.
প্রতিউত্তরে নওশিন বলে---
--বিয়েতো মানুষের এক বারই হয়।
.
নওশিনের এ কথাগুলো বলা, ইমু কখনো কোন কিছুই মনেই করেনা। নির্বোধের মতো শুধু ভালইবাসতে জানে। ইমু তবুও নওশিন-কে পাবার লক্ষ্য নিয়ে আগাতে থাকে। কিন্তু আশা ছাড়া কোন যে সফলতা মিলেনা সেটাতো আমাদের সকলেই জানা। ইমু নওশিনের যখনই কথোপকথন হয়, তখনই নওশিন 'হলোনারে' 'আমি তোমার হতে পারলাম না' 'আমি তোমায় অনেক কষ্ট দিলাম' এইসব বাক্য শুনায় আর কান্না করে। কান্নাতো জীবনের কোন সমাধাণ দিতে জানেনা। হঠাৎ করেই একদিন নওশিন বলে---
-- সোহেল ভাই ফোন দিছিলো, সে আমার কাছে জানতে চাচ্ছে। আমি তোমাকে কি স্বাভাবিক করার জন্য এখন কি শুধু কথা বলি নাকি। আমিতো পাখি, তোমায় এমন কোন কথা নাই যে বলতে পারবো না। আমিনা তোমায় আর কোন আশ্বাস দিতে চাইনা। আমি যদি তোমার হই তাহলে ঠিকিই তোমার থাকবো। আজ থেকে তোমার আমার মাঝে আর কোন কমিউনিকেশন হবে না। আর কোনদিন কোন কিছু তোমায় বলবো না।
.
ইমু নওশিন ফোনের এপাশ উপাশ থেকে দুজনেরই চোখের জল ঝড়াচ্ছে। ইমুর চোখের জল গুলা আজ খুব দ্রুত টুপটুপ করে সবুজ ঘাসের উপর পরছে। তবে আজ ইমুর কান্নার কোন আওয়াজ নেই। পাগলটা আগে মেয়েদের মতো উচ্চস্বরে করে কান্না করতো, আজ আর সেটা নেই। কথাগুলো বলেই ফোন রেখেদিলো দুজনে। ইমু শেষ কথাটা বলল---
-- পরিবারের সবার ভালোর জন্যই যখন এমনটা করলে, সবাই-কে অনেক ভালো রেখো।
.
তারপরেও প্রতিদিনের মতো রাত্রে শুভরাত্রির, শুভসকালেরব ম্যাসেজটা আদান-প্রদান হলো। নির্লজ্জ ইমু পরদিন আবার নওশিন-কে ফোন দিয়েছে---
-- হ্যালো,
-- হ্যালো..
-- কি করো?
--ব সে আছি, তুমি?
--আমিও,
-- খাইছো পাখি?
-- হুম, তুমি?
-- কি খাইছো?
-- আমি, আমি রুটি-ভাজি, তুমি?
-- ছোট মাছ দিয়ে ভাত,
ইমুতো কেবল এখন ভাত নিয়ে খেতে ঠিকি বসে, কিন্তু সে খাওয়া এখন শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়, মিথ্যে বলতে এই কথাগুলোই আজ নওশিন-কে বলতে শুরু করেছে।
-- এই তোমায় না বলছি আমার সাথে কোন
যোগাযোগ করবেনা।
-- আমি যোগাযোগ না করলে কি তুমি ভালো থাকবে বলো?
-- (নওশিন চুপ)
-- আমিতো জানি আমি কথা না বললে তুমি
কখনোই ভালো থাকবেনা। তাই ভালো রাখার জন্যে হলেও তোমায় ফোন দেই।
.
এভাবে কথা চলতে থাকে। দিনে ৪ বার ফোন
দেওয়ার মাঝে ৩ বারই নওশিন বলল---
-- তোমাকে না আমার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেদ করছি, আমার সাথে কথা বললেতো তুমি কষ্টই পাচ্ছো।
-- তোমার সাথে কথা না বললে যে আরো বেশি কষ্ট হয়!
.
নওশিনের এই কথাগুলো সত্যিই ইমুর মাঝে ভীষণ কষ্ট দেয়। কয়েক দিন যেতেই ইমুর সামনে এক ভাবনার প্রহর এসে উপস্থিত হয়। সারাটা রাত ইমু বসে বসে ভাবতে থাকে, খুঁজতে থাকে একটুকরো সুখ, কোন সন্ধান মেলেনা। ইমু নিজেও এখন প্রতিষ্ঠিত নয়। আর তাছাড়া সামনেই পরীক্ষা। ইমু জানে দু'মুঠো ভাত, আর পরিপাটি কিছু পোশাক একটি পূর্নাঙ্গ জীবন নয়। শুধু বেঁচে থাকার নাম জীবন নয়, বাঁচিয়ে রাখার নামই জীবন। যাইহোক, আহাদ ভাইয়া সে ইটালিয়ান সিটিজেন, ইমু শুনেছে বিয়ের পর নাকি নওশিন-কে সেখানেই নিয়েও যাবে। আর আমি! আমি তাকে ভালবেসেই বা তার জন্য কতটুকু করতে পারবো। সবার সম্মতিতে যেখানে
আধো বিয়ে হয়ে আছে। সেখানে নওশিন আশে পাশে মা-বাবা, ভাই-বোন, সবারই ভালবাসা পাবে। আর তাদের এই ভালবাসা হয়তো ইমুর এই ভালবাসা-কে ঠিকি একদিন ভুলিয়ে রাখতে পারবে। সবাইতো চায় ভালবাসার মানুষটি ভাল থাকুক। কোন চাহিদার সম্মুখি হয়ে, না পাবার বা দিতে না পারার কষ্টটা হয়তো এর চেয়েও অনেক বড় হবে। সেটা ভেবেই ইমুর নিজেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া। অনেক সময় যে ভালোবেসেও দূরেও চলে যেতে হয় তা আজ বাস্তবের মুখে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখছে ইমু। সেদিন হতেই রঙবেরঙের স্বপ্ন গুলো সব ধূসর-কালোয় হারিয়ে গেলো ইমুর। তারপর থেকে নওশিনের সাথে আর কোনদিনও ইমুর যোগাযোগ হয়নি। ইমু আজ আর অফিসে গেলনা। মাঝপথ থেকে বাসায় ফিরে আসলো। জামা-কাপর ছেড়ে ক্ষানিকটা সময় ঘুমের জন্য বিছনার উপর শুয়ে পড়লো ইমু। ৪ বৎসর ১ মাস ৩ দিন পর বুকের মাঝের যন্ত্রনাটা আবার তীব্র প্রখর হয়ে উঠলো। ঘুমাটাও স্বার্থপর হয়ে গেছে। এক এক করে সবাই চলে গেছে তাহলে ওই বা কেন থাকবে। ইমু উঠে বসলো, সখের ডাইরীটার মাঝে নওশিনের সাথে কাটানো সৃতিমাখা কিছু সময়ের উপর চোখ বুলাতে লাগলো ইমু। শেষ সম্বল চোখের জল গুলি গড়িয়ে পরতে পরতে পাতা গুলো ভিজে যেতে লাগলো। ডাইরীর মাঝের সেই নওশিন-কে দেবার জন্য দুইটি গোলাপ কিনেছিলো তার একটি গোলাপ নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলো ইমু। আস্তে আস্তে গোলাপটির উপর স্পর্শ করতে লাগলো ইমু। ইমু ভাবছে, নওশিনের ডাইরীর ভাজেও কি আরেকটি গোলাপ ঠিকি আজো ঘুমিয়ে আছে, হয়তো। ধূর! কি ভাবি সব নিজের মতো করে। আমার'তো ভাবতে বারণ, স্বপ্ন দেখতে বারণ, আমার আশা করতে বারণ। জীবনে যা কিছু নওশিনের কাছে থেকে পেয়েছে, তা আর কারো কাছে থেকে কোনদিনই পাবেনা ইমু। নতুন করে আর কোন কিছুর প্রয়োজনও নেই ইমুর। নওশিনের দেওয়া কলম নামের এই বস্তুটাকেই আঁকড়ে ঘিরে বাঁচবে ইমু। আজ কেন জানিনা নারীদের একটা কথা বলতে মন চাচ্ছে, তবে সেটা কাকে বলবো, কেইবা শুনবে______"কারো সাথে প্রেম করার আগে, কাউকে ভালবাসার আগে ফ্যামিলির সবার কাছ থেকে মতামত নিয়ে বাসবেন। প্রেম-ভালবাসা করবেন নিজের ইচ্ছায়, আর বিয়ে করবেন মা-বাবার ইচ্ছায় এমনটা যেন না হয়। অন্যথায় আপনি নিজেও কষ্ট পাবেন, আর ইমুর মতো হাজার ইমুকে স্বপ্ন দেখিয়ে একটি শুন্য হৃদয় উপহার দিয়ে যাবেন। সেটা কখনোই ভালো হবে না। তারচেয়ে ভালো প্রথম থেকেই বলে কয়ে পাঁ বাড়ান হয়তো তাতে সুখের সন্ধ্যান প্রথমেই পেয়ে যেতে পারেন। মতামত না পেলে সেখানেই থেমে গিয়ে নিজের অপরের হৃদয়টাকে রক্ষা করুন।
.
দু'দিন পর একটি বিকেলে ইমু অফিস থেকে বাসায় ফিরতে লাগছিলো। রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে বসে পরলো ইমু। বাদামওয়ালা কেউ দেখে নওশিনের কথা মনে পরে যায়। কিভাবে পাগলীটা বাদাম কেলিয়ে মুখের মাঝে তুলে খাওয়াতো। ভাবতে ভাবতেই মেয়েটিকে পাশে বসিয়ে রিকশা করে কোথা থেকে যেন নওশিন এদিকটায় আসছে। ইমু অনেক দূর থেকেই নওশিন-কে দেখতে পেয়েছে। নওশিন কাছে আসার পর খেয়াল করলো গাছটার নীচে ইমু বসে আছে। রিকশাওয়ালা-কে ইমুর সামনেই থামতে বলল। ভাড়াটা দিয়ে মেয়েটার হাত ধরে ইমুর সামনে এসে নওশিন দাঁড়িয়ে বলল---
--এভাবে এখানে বসে আছো কেন?
--কুড়াই,
--কুড়াই মানে?
--গল্প কুড়াই, এটাইতো আমার কাজ!!
--চলো ওদিকটাতে বসি,
--আমার এখন উঠতে হবে, অনেক সময় যাবৎ এখানেই বসে আছি।
--চলো না একটু!
.
ইমু উঠে দাঁড়ালো। ছোট্ট রোড বিসাইড উন্মুক্ত পার্কটার ভিতরের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো দুজনে। মাঝখানটায় ছোট্ট মেয়েটাকে বসালো। ইমু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল---
--মেয়েটা একদমই তোমার মতো হয়েছে..
--হুম,
--কি নাম রেখেছ ওর?
--আরিয়া ইরা,
.
ইমুর কষ্টের তীরটা হৃদয়টা বেধ করে বক্ষের
বিপরীতে অতিক্রম করে চলে গেল। দু'জনে মিলে ঠিক করেছিলো মেয়ে হলে তার নাম 'আরিয়া ইরা' রাখবে। মেয়েটির নাম ঠিকি আজ 'আরিয়া ইরা' ব্যতিক্রম শুধু ইমুর মেয়ে নয়, অন্য কারো। নওশিন জিজ্ঞাস করলো---
--কি করছো আজ কাল?
--যেই গল্প তোমায় আমার কাছে এনে দিয়েছিলো, সেটা নিয়েই আছি।
--আর?
--পার্টটাইম একটা জব করি, এইতো।
--মা বাবা কেমন আছে?
--ভালোই,
--বোনটা?
--তুমি যেটা পারোনি, বোন সেটা ঠিকি পেরেছে, ভালবাসারটানে আমাদের ছেড়ে গিয়ে নতুন করে সুখের সংসার সাজিয়েছে।
--ছোট ভাইটা?
--অনেক বড় হয়ে গেছে, নিজ স্বাধীন মতো
চলো। কারো কোন শাসন বারণ মানে না। বলে, 'জীবন আমার, সিদ্ধান্ত আমার' নিজেকে অনেক ভালবাসি, খারাপ কিছু গায়ে লাগিয়ে কলংক নিতে চাইনা। কোন ক্ষতি আমাকে দাড়া তোমাদের হবেনা,অন্তত এটা বিশ্বাস রেখো।
--বিয়ে করোনি কেন?
--তোমার মতো আর কাউকে পাইনি তাই, তবে পেলে করবো। নওশিন মনে আছে তোমার? তোমায় আপনি থেকে তুমি বলাতে কি আপ্রাণ চেষ্টা করতে হয়েছিলো আমার। তবুও তুমি কথা বলতে গিয়ে কতবার আপনি বলে ফেলতে। আমি শুধু
হাঁসতাম, ভাবতাম এই আধুনিক সোসাইটিতে এরকম একটা মেয়ে আমি পেয়েছি, সত্যিই আমি বড় সৌভাগ্যবান। একবারেরও জন্য ভাবতে পারিনি তুমি আমার হবেনা। ভাববোই বা কেন,আমিতো তোমায় আমার মাঝেই রাখতাম। ভাবতাম তুমি আর আমিতো আলাদা কিছু নয়। সবটাই হয়তো নিজের মতোই করে ভাবতাম। কতদিন থাকবে দেশে?
.
নওশিন কাপা কণ্ঠে বলল---
--থাকবো বেশকিছু দিন,
.
নওশিন টিসু বের করে চোখের জল গুলো মুছতে লাগলো।
ইমু বলে উঠলো---
--ছোট্ট এই টিসুটাতে আর কতটুকুই বা অচরুজল ধরে, আমিও আগে চোখের জল মুছে ফেলতাম। এখন আর ফেলিনা। শেষ সম্বল বলতে'তো এই নোনাজল টুকুই আছে, তাই আর বাধা দেইনা। চোখের মাঝে জল জমলে অঝর ধারায় ঝড়তে
দিই।
.
কথাগুলো বলে ইমু কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। নওশিন হঠাৎ ইমুকে জিজ্ঞাস করলো---
--আমি কেমন আছি সেটা জানতে চাইলে না?
--নাহ্!
--কেন?
--এমনিই, জানি...
--কি জানো??
--চোখের জলের চাইতে তুমি বেশি সঠিক বলতে পারবে না। মানুষ নিজে ভুল/মিথ্যা বলতে পারে, কিন্তু চোখের জল কখনো ভুল/মিথ্যে বলেনা।
.
কথাটা বলেই ইমু উঠে দাঁড়িয়ে দু'নয়ন ভাসিয়ে সোজাসুজি হেঠে চলে গেল। আর নওশিন, ৩ বছরের 'আরিয়া ইরা'-কে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগলো। অমিলিত দুটি হৃদয়ের ভালবাসার এটাই শেষ অধ্যায়। আজ রবিঠাকুরের সেই কথাটা খুব
মনে পরছে_____
"ভালবাসার সুখটা ক্ষণিকের জন্যে হলেও,
বিরহোটা চিরদিনের জন্যেই মিশে থাকে জীবনে"
সত্যিই তাই, শুনেছিলাম স্বর্গ থেকে পৃথিবীর মাঝে একমাত্র ভালাবাসায় বিদ্যমান হয়েছে। কিন্তু এই স্বর্গময়ী ভালবাসা যে পৃথিবীর সবচাইতে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি গুলিই পায় সেটা
কখনো জানা ছিলোনা। জানলে হয়তো
সেখানেই থমকে দাঁড়াতাম, এ বেলায় এসে বুঝেছি আমি এতোটা সৌভাগ্যবান নই।
.
বিঃদ্রঃ পুনরায় না পড়েই গল্পটা পোষ্ট করেছি ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন।

Comments

Popular posts from this blog

গল্প: বউ বউ লাগছে

বউয়ের মাইর

একটা বাস্তব জীবন কাহিনী